হুমায়ূন আহমেদ মারা যাওয়ার আগে বই মেলায় প্রতিবছর অপেক্ষা করতাম  তাঁর বইয়ের জন্য। মেলা শুরুর আগেই কত ভাবনা। বন্ধুদের সাথে আলোচনার সবচেয়ে বড় বিষয় থাকতো  হিমুর বইয়ের নাম কি হতে পারে তা নিয়ে। আহা! সেই সময় এখন আর নেই। সেই বন্ধুরা ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। স্কুল জীবনে দল বেঁধে সব বন্ধুরা বই মেলায় যেতাম। এখন সবাই যারা যার জীবন নিয়ে বিজি তাই একত্রে আর মেলা যাওয়া হয় না।

তবে এবার মেলায় আমার বেশি আকর্ষণ প্রযুক্তি বিষয়ক বইগুলো নিয়ে। মেলায় প্রযুক্তি বিষয়ক বেশ কয়েকটি বই বের হয়েছে। সেগুলো থেকে কিছু বই সম্পর্কে তুলে ধরা হয়েছে। এই তালিকার বাহিরে  আরও অনেক থাকতে পারে। আপনার জানা আরও বই থাকলে তা মন্তব্যে জানাতে পারেন।

‘গল্পে স্বল্পে প্রোগ্রামিং’ প্রোগ্রামিং শেখার বই নয়!:

বইয়ের নাম ‘গল্পে স্বল্পে প্রোগ্রামিং’ হলেও এটি প্রোগ্রামিং শেখার বই নয়। বইটিতে ‘প্রোগ্রামিং জিনিসটা আসলে কী’ এবং ‘কম্পিউটার যে একটি জাদুর বাক্স নয়’ সে বিষয় সহজ বাংলায় তুলে ধরা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য প্রযুক্তি ইন্সটিটিউটয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. বি.এম. মইনুল হোসেন বইটি লিখেছেন।

ড. বি.এম. মইনুল হোসেন বলেন, বইটিতে চেষ্টা করা হয়েছে বুদ্ধিমান মানুষের বুদ্ধিদীপ্ত কৌশলের বদৌলতে একটি বোকা যন্ত্রও কেমন করে কঠিন সব কাজ সম্পন্ন করে ফেলছে সে পদ্ধতিটা তুলে ধরার।

তিনি আরও বলেন, বইটির মাধ্যমে খুব গুরুত্বের সাথে আমি একটি বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমি কাউকে প্রোগ্রামার হয়ে যাওয়ার উপদেশ বা পরামর্শ দিচ্ছি না। বরং, খুব সহজ বাংলায় প্রোগ্রামিংয়ের স্বরূপ তুলে ধরার চেষ্টা করেছি বইটিতে। ফলে বইটি পড়ার পর পাঠক নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন তিনি প্রোগ্রামিং শিখবেন নাকি শিখবেন না।

প্রোগ্রামিং কিভাবে কাজ করে তা তুলে ধরার পাশাপাশি বইটিতে প্রোগ্রামিং নিয়ে একটি অধ্যায় যুক্ত করা হয়েছে। যেটি থেকে পাঠক বুঝতে পারবেন প্রোগ্রামিং তিনি নিজে কতটা উপভোগ করছেন বা করবেন। এর সাথে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন প্রোগ্রামিং শেখার পথে তিনি কতটুকু এগিয়ে যাবেন। এছাড়াও কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই যে প্রোগ্রামার হওয়া সম্ভব, বইটিতে সে বিষয়টিও পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

আদর্শ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত ১১০ পৃষ্ঠার বইটি পাওয়া যাবে ১৫০ টাকায়।  অনলাইনে ঘরে বসে বইটি কেনা যাবে এই ঠিকানা থেকে। এছাড়াও অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আদর্শ প্রকাশনীর ৪৯৬-৪৯৭ স্টল এবং নীলক্ষেতে মানিক লাইব্রেরিতে বইটি পাওয়া যাচ্ছে।

জাভা নিয়ে দ্বিমিক প্রকাশনীর নতুন বই:

বর্তমানের প্রোগ্রামিং ভাষার মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হলো জাভা। এই ভাষাটি যেন নতুনরা নিজের ভাষায় আরও সহজ ও আনন্দের সাথে শিখতে পারেন সেই লক্ষ্যে বইমেলায় নতুন বই এনেছে দ্বিমিক প্রকাশনী। ‘জাভা প্রোগ্রামিং’ নামে এই বইটি লিখেছেন আ ন ম বজলুর রহমান।

বর্তমানে আ ন ম বজলুর রহমান যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি সফটওয়্যার ডেভেলমেন্ট কোম্পানি (ভ্যানটেজ ল্যাবস, এলএলসি) তে জ্যেষ্ঠ সফটওয়্যার ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত আছেন।

বইটিতে মোট ১৫টি অধ্যায়ে বিভাজন করে জাভার প্রাথমিক বিষয়বস্তু সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। দেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে চার বা ছয় মাসের সেমিস্টার পদ্ধতি বিদ্যমান। এই সময়ের মধ্যে অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং ও প্রোগ্রামিংয়ের ভাষা হিসেবে জাভা শিক্ষায় অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিষয়বস্তু নির্বাচন ও শ্রেণীবিন্যাস করা হয়েছে।

আ ন ম বজলুর রহমান বইটি সম্পর্কে  বলেন, সময়পোযোগী একটা বই লেখার ইচ্ছে ছিল অনেক আগে থেকেই। বাংলাতে প্রোগ্রামিং ভাষার বই অনেকেই পছন্দ করেন না। এই অপছন্দের পেছনে খুব ভালো যুক্তি নিশ্চয়ই রয়েছে, তবে আমার বরাবরই মনে হয়েছে, মাতৃভাষায় কোনো কিছু শেখার আনন্দ সবসময়ই বেশি। তাই বইটি লেখা।

তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশের শিক্ষার্থীরা তাদের নিজেদের ভাষাতেই প্রযুক্তি নিয়ে পড়াশোনা করেন। তাদের কাছাকাছি হয়তো এখনই আমরা যেতে পারব না, কিন্তু হাঁটি হাঁটি পা পা করেই হয়তো একদিন অনেক কনটেন্ট বাংলাতে তৈরি হবে।

বইটিতে প্রোগ্রামিং ধারণা নেই এমন যে কারও কাজে লাগবে। তবে যদি সি বা পাইথন ধারণা থাকে তাহলে পরের দিকে সুবিধা পাবেন বলে জানান লেখক।

বইমেলার পাশাপাশি বইটি রকমারি ডটকমের এই ঠিকানা থেকে অনলাইনেও কেনা যাবে।

সি প্রোগ্রামিং নিয়ে বই মেলায় নতুন বই:

সহজে প্রোগ্রামিং শেখার জন্য অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশ হয়েছে সি প্রোগ্রামিং নিয়ে নতুন বই। আদর্শ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত এই বইটি লিখেছেন জাকির হোসাইন।

বইটি স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের উপযোগী করে লেখা। স্কুল কলেজে যারা প্রোগ্রামিং শিখতে চান, তারা সহজেই বইটি থেকে শুরু করতে পারবেন। প্রোগ্রামিং এর শুরু থেকে সব কিছু বিস্তারিতভাবে লেখা রয়েছে, যেমন কিভাবে প্রোগ্রাম লেখা যায়, প্রোগ্রাম কোথায় লিখতে হয়, কিভাবে লিখতে হয় ইত্যাদি সব কিছু।

জাকির হোসাইন  জানান,সি প্রোগ্রামিং খুবি জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ। সি প্রোগ্রামিংকে বলা হয় সকল প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের জননী। অপারেটিং সিস্টেমের মূল কার্নেল লেখা হয় সি প্রোগ্রামিং দিয়ে।

তিনি বলেন, আমরা যতগুলো ডিভাইস ব্যবহার করি, প্রায় সব ডিভাইসের মূল সফটওয়ার লেখা হয় সি প্রোগ্রামিং দিয়ে। সি প্রোগ্রামিং শেখার পর অনেক জায়গায়ই প্রয়োগ করা যাবে। সফটওয়ারের পাশাপাশি কেউ যদি হার্ডওয়ার সিস্টেম নিয়ে কাজ করতে চায়, তার জন্য উপযুক্ত প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ হচ্ছে সি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ। তাই নিজ ভাষায় যেন এই ভাষাটি সবাই শিখতে পারে সেলক্ষ্যে বইটি লেখা।

তিনি আরও বলেন, এছাড়া যারা ইউনিভার্সিটিতে সি প্রোগ্রামিং কোর্সটি করছে, মাতৃভাষায় বইটি লেখার কারণে তাদের প্রোগ্রামিং শেখায় দারুণ সহায়ক হবে।

বইমেলায় আদর্শ প্রকাশনীর স্টলে বইটি পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া ঘরে বসে রকমারি ডটকমের এই ঠিকানা থেকে বইটি অনলাইনে কেনা যাবে।

এছাড়া নীলখেত মানিক লাইব্রেরিতেও বইটি পাওয়া যাবে। বই পড়ে সমস্যা বা কোনো কিছু জানার থাকলে লেখকের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করা যাবে এই ঠিকানায় গিয়ে।

মেলায় নতুন বই সহজ ভাষায় পাইথন ৩:

প্রোগ্রামিং একটি শৈল্পিক ব্যাপার। তবে সঠিক ধারণার অভাবে আমাদের দেশে কম্পিউটারের বিশেষ এ ভাষাকে কঠিন ও জটিল মনে করেন অনেকেই। কাঠখোট্টা একাডেমিক জীবন ও সিনট্যাক্স পড়ে নতুনদের অনেকেই প্রোগ্রামিং থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন।

এমন ভাবনা থেকে নতুনদের জন্য সহজে প্রোগ্রামিং শেখার একটি বই প্রকাশ করা হয়েছে গ্রন্থমেলায়। এবারের মেলায় আসা এ বইয়ের নাম ‘সহজ ভাষায় পাইথন ৩’ ।

আদর্শ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত এ বই লিখেছেন মাকসুদুর রহমান মাটিন।

বইটি তিন ভাগে বিভক্ত- বিগিনার, ইন্টারমিডিয়েট ও অ্যাডভান্সড। পাইথনের যাবতীয় বিগিনার ও ইন্টারমিডিয়েট লেভেলের টপিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে সহজ ভাষায় বোঝানো হয়েছে।

অ্যাডভান্সড লেভেলের কয়েকটি বিষয়ে শুধু ধারণা দেওয়া হয়েছে। বইটি পড়ার পর কি করতে হবে সে বিষয়েও বিস্তারিত গাইডলাইন রয়েছে। এ দিক থেকে বইটি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্র-ছাত্রীর জন্যই বেশ উপযোগী।

পাইথন-৩ (পাইথনের সর্বশেষ মেজর ভার্সন) নিয়ে লিখিত এ বইয়ে যাবতীয় খুঁটিনাটি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। প্রতিটি বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে পর্যাপ্ত উদাহরণ।

বইটিকে এমনভাবে সাজানো হয়েছে যেন যে কেউ বইটি দিয়েই তার জীবনের প্রথম প্রোগ্রামিং শেখা শুরু করতে পারে।

মাকসুদুর রহমান মাটিন  বলেন, দেশে সি, সি++ বা জাভার মতো পাইথন এখনও জনপ্রিয়তা পায়নি। তবে এ ভাষা শিখতে চায় এমন আগ্রহীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। তারা পাইথন শেখার জন্য ভালো বাংলা বই নেই বলে হতাশ হন। তাদের জন্যই সহজ ভাষায় বইটি লেখা হয়েছে।

বইমেলায় আদর্শ প্রকাশনীর ৪৯৬-৪৯৭ নম্বর স্টলে পাওয়া যাচ্ছে। নীলক্ষেতের মানিক লাইব্রেরি ও হক লাইব্রেরিতেও বইটি পাওয়া যাবে। চাইলে ঘরে বসে রকমারি ডটকমের  এ ঠিকানা থেকেও কেনা যাবে।

এই সবগুলো বই নিয়ে লেখা পূর্বে টেকশহর ডটকমে প্রকাশিত হয়েছিলো।

বন্ধুদের জানিয়ে দেন
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments