শাওমির ভারতীয় কার্যক্রমের প্রধান হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করছেন মানু কুমার জেইন। ২০১৭ সালে তিনি প্রতিষ্ঠানটির ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্বও পান।
মঙ্গলবার বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে চীনের প্রযুক্তিপণ্য নিমার্তা প্রতিষ্ঠান শাওমি তাদের কার্যক্রমের ঘোষণা দেয়। সেই সংবাদ সম্মেলন শেষে টেকশহরের মুখোমুখি হয়েছিলেন মানু কুমার জেইন। বিস্তারিত জানাচ্ছেন তুসিন আহমেদ।
তুসিন আহমেদ : বাংলাদেশে শাওমি নিয়ে পরিকল্পনা কী?
মানু জেইন : বাংলাদেশের বাজারে স্মার্টফোনের চাহিদা সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।দেশের বেশির ভাগ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য স্মার্টফোন ব্যবহার করেন। বিশেষ করে শহর অঞ্চলের বাহিরের গ্রাহকরা ইন্টারনেটে যুক্ত থাকতে কম্পিউটার বা ল্যাপটপের বদলে স্মার্টফোন বেশি ব্যবহার করেন। তাই আমাদের লক্ষ্য দেশের সব গ্রাহকরা যেন সাশ্রয়ী দামে উন্নত ফিচারের স্মার্টফোন ব্যবহার করতে পারেন সেদিকে। আমাদের পরিকল্পনা গ্রাহককে ঘিরে এবং তাদের হাতে উন্নত স্মার্টফোন তুলে দেওয়া।
তুসিন আহমেদ : প্রায় কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে ন্যাশনাল ডিস্ট্রিবিউটরের মাধ্যমে শাওমির ডিভাইস বিক্রি হচ্ছিল। গ্রাহকদের অভিযোগ, আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় বেশি দামে তারা ডিভাইস বিক্রি করতো। বিষয়টি কী আপনার নজরে পড়েছে?
মানু জেইন : হ্যান্ডসেটের ওপর বাংলাদেশে ট্যাক্স তুলনামূলকভাবে বেশি ভারত ও চীনের তুলনায়। আর যেহেতু এতদিন শাওমি লোকাল ডিস্ট্রিবিউটরের মাধ্যমে বিক্রি হতো সে ক্ষেত্রে অফলাইন স্টোর, ডিলারশিপ ও স্টোরগুলো নিয়ন্ত্রণে বেশি ব্যয় হতো। তাই দাম বেড়ে যেত।
এছাড়া শাওমি আগে বাংলাদেশ নিয়ে ততোটা ফোকাস ছিল না। এই জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। তবে এখন থেকে আন্তর্জাতিক বাজারের মত দামে পাওয়া যাবে শাওমির সব ডিভাইস।
তুসিন আহমেদ : দেশের গ্রাহকরা শাওমির পণ্যে ওয়ারেন্টি বা সার্ভিসিং কেমন পাবেন?
মানু জেইন : শাওমি সব সময় চেষ্টা করে গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে। বর্তমানে শাওমির ফোন কিনলে গ্রাহকরা এক বছরের অফিসিয়াল ওয়ারেন্টি পাবেন। দেশের গ্রাহকরা বাংলাদেশের সাতটি সার্ভিস সেন্টার থেকে এ সেবা নিতে পারবেন।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, ভারতে যখন শাওমি যাত্রা শুরু করে তখন মাত্র দুইটি সার্ভিসিং সেন্টার ছিল। কিন্তু সেই তুলনায় বাংলাদেশে প্রায় তিনগুণের বেশি সার্ভিসিং সেন্টার রয়েছে শুরু থেকেই। ধীরে ধীরে সেন্টারের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে।
তুসিন আহমেদ : বাংলাদেশে কী শাওমি অফিস নিয়েছে?
মানু জেইন : না, এই মুহূর্তে বাংলাদেশে শাওমির কোন অফিস নেই। তবে আগামী তিন মাসের মধ্যে শাওমি বাংলাদেশে অফিস নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
তুসিন আহমেদ : ভারতে শাওমি ফোন উৎপাদন করছে। বাংলাদেশেও কী ম্যানুফ্যাকচারিং কারখানা খোলার কোন পরিকল্পনা আছে?
মানু জেইন : হ্যাঁ, বাংলাদেশে অবশ্যই আমরা ম্যানুফ্যাকচারিং কারখানা চালু করতে চাই। এই কাজটি করতে অনেক সময়ের প্রয়োজন। ভারতের প্রায় ২-৩ বছর পরে আমরা ম্যানুফ্যাকচারিং শুরু করতে পেরেছি। মাত্র তো বাংলাদেশের বাজারে প্রবেশ করলাম। তাই এই সম্পর্কে আগেভাগে কোন নির্দিষ্ট দিন তারিখ বলতে চাই না। তবে আমাদের ইচ্ছা আছে।
তুসিন আহমেদ : শাওমি ফোন ছাড়াও অনেক অ্যাক্সেসরিজ ও গ্যাজেট তৈরি করে। এই ডিভাইসগুলো কবে অফিসিয়ালভাবে পাওয়া যাবে?
মানু জেইন : আপাততো শাওমি স্মার্টফোন নিয়ে ফোকাস দেবে বাংলাদেশের বাজারে। আগামী কয়েক মাসে শুধু স্মার্টফোন ও অ্যাক্সেসরিজ বিক্রি করবে। এরপর ধীরে ধীরে শাওমির অন্য হোম অ্যাপ্লায়েন্স পণ্যগুলো আনা হবে। তবে কবে থেকে হোম অ্যাপ্লায়েন্স পাওয়া যাবে নির্দিষ্ট দিন তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি।
তুসিন আহমেদ : বাংলাদেশের কয়জন কর্মকর্তা শাওমিতে জয়েন করেছে?
মানু জেইন : আমরা এখনো তা নির্ধারণ করেনি। তাই সঠিক সংখ্যাটি বলতে পারছি না এখনো। অনেকের ইন্টারভিউ নেয়া হয়েছে। তবে এখনো সরাসরি কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই তা নির্ধারণ করা হবে। আশা করি তখন জানানো যাবে।
তুসিন আহমেদ : আপনি কীভাবে শাওমির সঙ্গে যুক্ত হলেন সেই গল্পটি জানতে চাই?
মানু জেইন : ২০১১ সালের দিকে আমি জাবং ডটকম নামে একটি ই-কমার্স প্লাটফর্ম চালু করি। তখন ভারতের ই-কমার্স খাত ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পাচ্ছিল। পরবর্তীতে আরেক জনপ্রিয় ই-কমার্স প্লাটফর্ম ফ্লিপকার্ট জাবং ডটকমকে কিনে নেয়। সেই সময় ভারতে স্মার্টফোন বেশ জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। তখন চীনের প্রতিষ্ঠান শাওমি সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। তারপর আস্তে আস্তে শাওমি প্রতি ভালোবাসা জাগতে শুরু করে। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে আমি শাওমিতে কাজ শুরু করি।
তুসিন আহমেদ : শুরু দিকে ভারতে কয়জন কর্মী নিয়ে যাত্রা শুরু করে শাওমি?
মানু জেইন : শাওমি যখন ভারতে যাত্রা শুরুর সময় কর্মী হিসেবে শুধু আমি ছিলাম। তারপর এক রুমের একটি অফিস নেয়া হয় সেখানে আরো দুইজন কর্মী যুক্ত হয়। ধীরে ধীরে শাওমি ভারতে এগিয়ে যেতে থাকে। বর্তমানে প্রায় ৫০ হাজার কর্মী ভারত শাওমিতে চাকরি করে। আশা করছি বর্তমানে বাংলাদেশে কোন কর্মী না থাকলেও ধীরে ধীরে তা ভারতের মতই এগিয়ে যাবে।
[…] […]