প্রতিবছর সেপ্টেম্বর মাসে অ্যাপলের ইভেন্টে নতুন আইফোন আনা হবে এটাই সবাই ভেবেছিল। কিন্তু এবার ইভেন্টে কোন আইফোন আনা হয়নি। বরং এবার ইভেন্টটি ফোকাস ছিল অ্যাপল ওয়াচ ও আইপ্যাড নিয়ে। চলুন একটু বিস্তারিত জানানি কি কি আনলো অ্যাপল।
এক নজরে সূচী
নতুন দুই অ্যাপল ওয়াচ
অ্যাপলের ফিটনেস ডিভাইসের দিকে নজর আগে থেকেই। এবার সেই বিষয়গুলো আরো বেশি চোখ পড়লো। সাধারণ অ্যাপল প্রতি বছর একটি ওয়াচ উন্মোচন করে। কিন্তু এবার দুইটি ঘড়ি নিয়ে হাজির। অনেকেই অভিযোগ করে যে, অ্যাপল ওয়াচের দাম বেশি তাই কিনতে পারেনা। তাদের কথা মাথায় রেখে কমদামী একটি সংস্করণও আনা হয়েছে।
অ্যাপল ওয়াচ ৬
ডিজাইনের দিক দিয়ে তেমন কোন বাড়তি পরিবর্তন আনা হয়নি অ্যাপল ওয়াচ ৬ এ। ডিজাইন দেখতে অনেকটা ওয়াচ ৫ এর মতই। নতুন কিছু রঙ যুক্ত করা হয়েছে। ডিভাইসটি নীল, গোল্ড, গ্রাফাইট, লাল রঙে পাওয়া যাবে। নতুন ফিচার হিসেবে এতে যুক্ত হয়েছে ব্লাড অক্সিজেন লেভেল পরিমাপ করার সুবিধা। করোনার এই সময় রক্তে অক্সিজেনের লেভেল পরিমাপ করাটা জরুরি। এই বিষয়টিকে মাথায় রেখেই দারুণ এই সুবিধাটি আনা হয়েছে।
যদি কোন ব্যক্তি অক্সিজেন লেভেল পরিমানের তুলনায় কম তাহলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তা জানিয়ে দিবে অ্যাপল ওয়াচ ৬। ব্লাড অক্সিজেন লেভেল পরিমান করার সেন্সরটি চারটি এলইডি ক্লাস্টারের দ্বারা তৈরি। সেন্সরটি রক্তের অক্সিজেনের স্তর নির্ধারণ করতে রক্ত অক্সিজেন অ্যাপের সাথে একযোগে কাজ করে।
তবে নতুন ওয়াচের বক্সে কোন অ্যাডপ্টার নেই। শুধু মাত্র চার্জিং কেমন দেয়া হয়েছে। অ্যাপল বলছে, পরিবেশের ভারসম্য রক্ষার জন্য এমনটা করা হয়েছে। কিন্তু অনেকেই মনে করছে বক্সে অ্যাডপ্টার না দেয়াটা অ্যাপলের নতুন ব্যবসায়িক কৌশল। কেননা গ্রাহকরা অ্যাপলের অ্যাডপ্টার কিনতে বাড়তি টাকা খরচ করে। যা দিয়ে অ্যাপলেই লাভ হবে। এছাড়া অ্যাডপ্টার না দেয়াতে নতুন ওয়াচ উৎপাদন খরচ কিছুটা কমে গেল।
ডিভাইসটিতে যুক্ত করা হয়েছে ডুয়েল কোর এস৬ চিপসেট। যা অ্যাপল ওয়াচ ৫ এ ব্যবহৃত এস৫ চিপসেট থেকে ২০% বেশি দ্রুত গতিতে কাজ করবে। সেই সাথে ব্যাটারি অপটিমাইজেশন ভালো মিলবে বলে জানিয়েছে অ্যাপল।
১.৭৮ ইঞ্চি ডিসপ্লের স্ক্রিন টু বডি রেশিও ৬০%। রেজুলেশন হলো ৪৪৮*৩৬৮ পিক্সেল এবং ৩২৬ পিপিআই ডেনসিটি। স্যাফায়ার ক্রিস্টাল গ্লাস রয়েছে ডিসপ্লে প্রটেকশন হিসেবে। এছাড়া রয়েছে থ্রিডি টাচ ডিসপপ্লে ও সব সময় ডিসপ্লে অন প্রযুক্তি।
Solo Loop নামে নতুন ধরনের ব্ল্যান্ড এনেছে অ্যাপল। ফলে অ্যাপল ওয়াচ ৬ এর একটা ব্ল্যান্ডের সাহায্যে হাতে আটকে থাকবে। অনেকা প্রথাগত হাতে পরা ব্যাসলাইটের মতই।
অ্যাপল ওয়াচ ৬ এর মূল্য শুরু হয়েছে ৩৯৯ মার্কিন ডলার থেকে। ব্যান্ড ও ম্যাটেরিয়াল অনুযায়ী আরো কয়েকটি সংস্করনে পাওয়া যাবে ডিভাইসটি। সবগুলো সংস্করণ দেখতে পাবেন এই লিংকে।
অ্যাপল ওয়াচ এসই
অ্যাপলের টাগের্ট কিন্তু এখন মিডরেঞ্জের বাজার। তাই মিডরেঞ্জ গ্রাহকদের জন্য কমদামী অ্যাপল ওয়াচ এসই আনা হয়েছে। এটির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২৭৯ মার্কিন ডলার।
ডিজাইনে অ্যাপল ওয়াচ ৬ থেকে তেমন কোন পার্থক্য নেই। তবে হার্ডওয়্যার ও ফিচারে রয়েছে। এতে নেই এসিজি ও অক্সিজেন লেভেল পরিমাপ করার সুবিধা। রয়েছে এস৫ চিপসেট। সব সময় ডিসপ্লে অন সুবিধা নেই।
আইপ্যাড (অষ্টম জেনারেশন)
এই বছর ১০ বছর পা দিলো আইপ্যাড। এই পর্যন্ত ৫০০ মিলিয়ন আইপ্যাড বিক্রি করেছে অ্যাপল। ৫৩% নতুন ব্যবহারকারী আইপ্যাড কিনে থাকে। ১০ বছর ধরে গ্রাহকদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে আইপ্যাড।গুগলের ক্রোমবুক থেকে ৬ গুন বেশি বিক্রি হয়েছে আইপ্যাড। এমন নানা তথ্য দিয়ে নতুন আইপ্যাড উন্মোচনের ঘোষণা দেয় অ্যাপল সিইও টিম কুক।
আইপ্যাড (অষ্টম জেনারেশন) এ রয়েছে এ১২ বায়নিক চিপসেট। এতে রয়েছে ৬ টি কোর। ২০১৯ সালে উন্মোচন হওয়া আইপ্যাড (সপ্তম জেনারেশন) থেকে ৪০% বেশি গতি এই ডিভাইসে। রয়েছে ৪ কোরের অ্যাপল জিপিইউ। দুই গুন দ্রুত গ্রাফিক্স সুবিধা পাওয়া যাবে। এই গতিময় সুবিধা গেইমিং ও প্রতিদিনকার কাজে আইপ্যাড ব্যবহারকে আরো সহজ করে তুলবে।
ডিজাইনে তেমন কোন পরিবর্তন আনা হয়নি। ডিসপ্লে সাইজ ১০.২ ইঞ্চি। রেজুলেশন ২১৬০*১৬২০ এবং পিপিআই ২৬৪। এতে অ্যাপলের প্রথম প্রজন্মের পেন্সিল সাপোট করবে।
ছবি তোলার জন্য পিছনে রয়েছে ৮ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা। যা দিয়ে এইচডি ভিডিও রেকর্ড করা যাবে। সেলফি ও ভিডিও চ্যাটের জন্য সামনে রয়েছে ১.২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা। ডিভাইসটির মূল্য শুরু হয়েছে ৩২৯ মার্কিন ডলার থেকে।
আইপ্যাড এয়ার
আইপ্যাড এয়ারের ডিজাইন কিছুটা আইপ্যাড প্রো এর মত। এতে রয়েছে ১০.৯ ইঞ্চি লিকুয়েড রেটিনা ডিসপ্লে। রেজুলেশন ২৩৬০*১৬৪০ পিক্সেল এবং ডেনসিটি ২৬৪ পিপিআই। এতে অ্যাপলের দ্বিতীয় প্রজন্মের পেন্সিল সাপোট করবে। এতে রয়েছে টাচ আইডি, আইপ্যাডের উপরে থাকা পাওয়ার বাটনে এটির অবস্থান।
প্রসেসর হিসেবে এতে রয়েছে নতুন ৫ ন্যানোমিটারের এ১৪ বায়নিক চিপসেট। প্রযুক্তি দুনিয়াতে এটাই প্রথম ৫ ন্যানোমিটারের প্রসেসর। এতে রয়েছে ৬ টি কোর। যা পূর্বের আইপ্যাড এয়ার থেকে ৪০% বেশি গতির সুবিধা দিবে। রয়েছে ৪ কোর জিপিও। যা পূর্বের সংস্করন থেকে ৩০% বেশি গ্রাফিক্স সুবিধা দিবে। গতি বৃদ্ধি হবে ২ গুন।
ছবি তোলার জন্য পিছনে রয়েছে ১২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা। যা দিয়ে ফোরকে ভিডিও রেকর্ড করা যাবে। সেলফি ও ভিডিও চ্যাটের জন্য সামনে রয়েছে ৭ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা। রয়েছে টাইপ সি চার্জি পোর্ট।
সিলিভার, গ্রে, রোজ গোল্ড, গ্রীন, স্কাই ব্লু এই তিনটি রঙে পাওয়া যাবে ডিভাইসটি। ডিভাইসটির মূল্য শুরু হয়েছে ৫৯৯ মার্কিন ডলার থেকে।
ফিটনেস প্লাস
করোনার এই সময়ে শরীর ভালো রাখতে শারীরিক ব্যায়ামের দিকে নজর সবার। এই সুযোগে ফিটনেস প্লাস নামে ফিটনেস প্লাটফর্ম নিয়ে হাজির অ্যাপল। এই প্লাটফর্মটিতে দক্ষ ট্রেইনারের মাধ্যমে ভার্চুয়ালভাবে ব্যায়াম করা যাবে। ব্যায়ামের ফল কতটুকু ক্যালরি বান হচ্ছে তা জানা যাবে অ্যাপল ওয়াচের মাধ্যমে। তবে এই সুবিধাটি ফ্রি মিলবে না। ফিটনেস প্লাস প্লাটফমটি ব্যবহার করতে প্রতি মাসে গুনতে হবে ৯.৯৯ ডলার। যদি এক সাথে এক বছর সাবক্রাইব সুবিধা নিতে চান ব্যয় করতে হবে ৭৯.৯৯ ডলার।