ডিজিটাল মার্কেটিং বর্তমান সময়ে সবচেয়ে আলোচিত পেশাগুলোর মধ্যে একটি। অনলাইনের জনপ্রিয়তার এই যুগে কোম্পানিগুলো তাদের পণ্যের প্রচারণার জন্য ডিজিটাল প্লাটফর্মকে পছন্দ করে। কেননা প্রথাগত মাকেটিং থেকে বেশি আউটপুট পাওয়া যায় এতে। ফলে এই খাতে চাকরির নতুন বাজার সৃষ্টি হচ্ছে। তাই টেক কাল্টে নতুন একটি সিরিজ শুরু হতে যাচ্ছে ডিজিটাল মাকেটিং নিয়ে। এই সিরিজটি লিখবেন শাহ শাইফুল্লাহ আল জাকারিন। তিনি ডিজিটাল মাকেটার হিসেবে দেশের সুপরিচিত একটি এজেন্সীতে কর্মরত আছেন।
এই সিরিজ লেখার আগে লেখক চিন্তা ভাবনা তুলে ধরছি। শাহ শাইফুল্লাহ আল জাকারিন লিখেন, গত বুধবারে হোম কোয়ারেন্টাইনের এই দিনগুলোকে কিভাবে কাজে লাগানো যায় তা নিয়ে ভাবতে গিয়ে মনে হলো ডিজিটাল নিয়ে অল্প স্বল্প যা জানি তা এই সেক্টরের নতুনদের সাথে শেয়ার করতে পারি। এই লেখার বিভিন্ন ভুল ভ্রান্তি নিয়ে এই সেক্টরের অভিজ্ঞরাও কমেন্টে আলোচনা করতে পারি। আজকে প্রথম পর্ব।
এক নজরে সূচী
ইম্প্রেশন
ডিজিটাল মাধ্যমে যে কোন একটি বিজ্ঞাপন দেখাকেই ইম্প্রেশন বলে। ডিজিটাল মিডিয়ার একেবারে বেসিক ম্যাট্রিক্স ইম্প্রেশন। আপনি ইউটিউবে কোন একটি ভিডিও দেখছেন এর মাঝে একটি বিজ্ঞাপন চলে আসলো, কিংবা প্রথম আলোর অনলাইন ভার্সনে সংবাদ পড়ার সময়ে সংবাদের বামে কিংবা মাঝে কোন ব্যানার দেখলেন কিংবা ফেসবুকে কোন ভিডিও দেখার সময়ে ভিডিও এর মাঝে অন্য একটি বিজ্ঞাপন চলে আসলো এই বিজ্ঞাপনের প্রতিটাই এক একটি ইম্প্রেশন। যখনই আপনি কোন বিজ্ঞাপন দেখেন তখনই একটি ইম্প্রেশন সার্ভ করা হয়।
ইম্প্রেশন ডিজিটাল মার্কেটিং এর অন্যতম একটি একক। একটি বিজ্ঞাপন কতবার সার্ভ করা হলো তা নির্ণয় করা হয় ইম্প্রেশন এককের মাধ্যমে। বিজ্ঞাপন দেয়ার সময় বেসিক যে একক ধরতে হবে তা হলো ইম্প্রেশন। একটি বিজ্ঞাপনের জন্য ১০ লাখ ইম্প্রেশন নেয়া মানে বিজ্ঞাপনটি ১০ লাখ বার দেখানো হবে। গুগোল কিংবা ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেয়ার সময়েও ইম্প্রেশন একক ধরেই মূল্য নির্ধারণ করা হয়। যে কোন অনলাইন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়ার সময়েও ইম্প্রেশনকে একক ধরেই হিসেব করা হয়।
ধরা যাক একটা অনলাইন নিউজ পোর্টালে আপনার পণ্যের বিজ্ঞাপন দিবেন, আপনাকে এর মূল্য নির্ধারণ করতে হবে ইম্প্রেশন ধরেই। সাধারনত প্রতি ১০০০ ইম্প্রেশনকে এই সিপিএম (কস্ট পার মেইল) ধরা হয়। ধরে নেই, দৈনিক বাংলা প্রতিদিন ডট কম একটি অলনাইল নিউজ পোর্টাল, এইখানে আপনি আপনার পণ্যের বিজ্ঞাপন দিবেন। এই পত্রিকা প্রতিদিন যে কোন ব্যানার ৫ লাখ বার দেখানো যায় (মানে ৫ লাখ ইম্প্রেশন), আপনি হয়তো প্রতিদিন তিন লাখ ইম্প্রেশন কিনতে চান। এই পত্রিকায় সিপিএম (মানে প্রতি হাজার ইম্প্রেশন এর মূল্য) ৫০ টাকা তাহলে তিনলাখ ইম্প্রেশনের মূল্য বেড় করার ফর্মূলা হলোঃ
৩০০০০০/১০০০*৫০ = ১৫,০০০ টাকা।
রিচ
রিচ ডিজিটাল মিডিয়ায় ব্যবহৃত আর একটি অন্যতম একক। একটি বিজ্ঞাপন যতোজন মানুষের কাছে পৌছায় তাকে রিচ বলে। রিচ আর ইম্প্রেশনের পার্থক্য বোঝা জরুরী। একটি বিজ্ঞাপন যদি ৫ লাখ মানুষ দেখে তবে তার রিচ ৫ লাখ কিন্তু ৫ লাখ মানুষের সামনে বিজ্ঞাপনটি যদি ৭ লাখ বার দেখানো হয় তাহলে তার ইম্প্রেশন ৭ লাখ। অর্থাৎ যতোজন মানুষের কাছে আপনার বিজ্ঞাপন ডিজিটালে গিয়েছে সেইটা রিচ আর এই মানুষদের কাছে যত সংখ্যক বার আপনার বিজ্ঞাপন সার্ভ হয়েছে সেই সংখ্যাটা ইম্প্রেশন।
উপরের ছবিটি রিচ আর ইম্প্রেশনের মাঝে সহজে পার্থক্য বোঝাবে। একইদিন একই সময়ে banglanews24.com এ প্রবেশের পরে আমরা লাল মার্ক চিহ্নিত দুইটি বিজ্ঞাপন পেয়েছি। দুইটি বিজ্ঞাপনই একই ব্র্যান্ডের, একই প্রোগ্রামের। কিন্তু বিজ্ঞাপনটি দুইবার আমাকে সার্ভ করেছে, তার মানে ইম্প্রেশন দুই কিন্তু বিজ্ঞাপনটি দুইবারই একজন ব্যাক্তি হিসেবে আমাকের সার্ভ করেছে তাই বিজ্ঞাপনটির রিচ ১। যদি ২০ জনকে ব্যাক্তিকে এই একই বিজ্ঞাপনটি ৬০ বার সার্ভ করতো তাহলে রিচ হতো ২০ আর ইম্প্রেশন ৬০।
ফ্রিকুয়েন্সি
একজন ব্যাক্তি যতবার আপনার বিজ্ঞাপন দেখবে সেইটাকেই ফ্রিকুয়েন্সি বলা হয়। ধরুন আপনি চাচ্ছেন আপনার বিজ্ঞাপনটি আগামী ৭ দিনে আপনি অডিয়েন্স (যার উদ্দেশ্যে বিজ্ঞাপন প্রদান করছেন) ৪ বার বিজ্ঞাপন দেখবেন তাহলে আপনার বিজ্ঞাপনের ফ্রিকুয়েন্সি হবে চার। বেশিরভাগ এড নেটওয়ার্কে আপনি ফ্রিকুয়েন্সি পূর্ব নির্ধারিত করে দিতে পারবেন। এই প্রক্রিয়াকে ফ্রিকুয়েন্সি ক্যাপ বলে।
যদি আপনি ফ্রিকুয়েন্সি ক্যাপ ৩ নির্ধারণ করে দেন আর আপনার বিজ্ঞাপনটি ১৫ লক্ষ ইম্প্রেশন সার্ভ করে তাহলে স্বাভাবিক প্রেক্ষাপটে আপনার বিজ্ঞাপনের রিচ হবে সর্বোচ্চ ৫ লক্ষ।
এংজেগমেন্ট
আপনি ফেসবুকে একটি বিজ্ঞাপনে দিয়েছেন সেই বিজ্ঞাপনটি দেখে কেও লাইক, শেয়ার, কমেন্ট করলো কিংবা আপনার ব্যানার বিজ্ঞাপন দেখে কেও সেই ব্যানারে ক্লিক করলো কিংবা আপনার যে কোন কন্টেন্টে কেও যখন এংগেজ হয় তখন তাকে এংগেজমেন্ট বলা হয়।
সিপিসি
সিপিসি মানে কস্ট পার ক্লিক। আমরা যখন ডিজিটাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দেই তার পেছনে বিভিন্ন রকম উদ্দেশ্য থাকে। একটি উদ্দেশ্য হতে পারে আপনার বিজ্ঞাপন দেখে অডিয়েন্স আপনার বিজ্ঞাপনে ক্লিক করে যেনো আপনার নির্ধারিত করে দেয়া কোন ওয়েবসাইট পৌঁছায়। খুব সহজ ভাষায় বিজ্ঞাপন থেকে আপনার ওয়েবসাইটে মানুষ নেয়া। এই রকম বিজ্ঞাপনে অডিয়েন্সের ক্লিক করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আপনার উদ্দেশ্য অডিয়েন্সকে আপনার ওয়েবসাইটে ভিজিট করা, আপনি বিজ্ঞাপন দিলেন কিন্তু কেও সেই বিজ্ঞাপনে ক্লিক করলো না কিংবা এংগেজমেন্ট করলো না তাহলে আপনার বিজ্ঞাপনের উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। প্রতিটা ক্লিকের জন্য আপনার যে খরচটি হবে তাকেই সিপিসি কিংবা কস্ট পার ক্লিক বলে। গুগোল এড নেটওয়ার্কের মতো বেশিরভাগ এড নেটওয়ার্কে আপনি বিজ্ঞাপন দেয়ার সময়েই সর্বোচ্চ সিপিপি নির্ধারণ করে দিতে পারবেন। অর্থাৎ আপনি যদি নির্ধারণ করে দেন আপনার সর্বোচ্চ সিপিসি ৮ টাকা তাহলে আপনার বিজ্ঞাপনের একটি ক্লিকেই সর্বোচ্চ ৮ টাকা পর্যন্ত খরচ হবে।
কনভার্শন
যে কোন ডিজিটাল ক্যাম্পেইনে আপনার শেষ পর্যন্ত একটি লক্ষ্য নির্ধারিত থাকতে পারে। যেমন ইকমার্সের ক্যাম্পেইন লক্ষ্য নির্ধারিত হতে পারে পণ্যটি বিক্রি করা কিংবা তাদের এপস ডাউনলোড করা। আবার রিয়েলিটি শো কিংবা ফ্রি স্যামপ্লিং ডিজিটাল ক্যাম্পেইন এর শেষ লক্ষ্য হতে পারে রেজিস্ট্রেশন সম্পূর্ণ করা। আমাদের ডিজিটাল ক্যাম্পেইনের শেষ লক্ষ্য যেইটি নির্ধারিত হয়ে সেইটি অর্জন হওয়াকেই কনভার্শন বলে। ধরা যাক, বাংলাদেশের বিখ্যাত ইকমার্স কোম্পানী দারাজ একটি ডিজিটাল ডিসপ্লে ক্যাম্পেইন করছে যেই ডিসপ্লে ক্যাম্পেইনের ব্যানারে ক্লিক করলে দারাজের ওয়েবয়াইটে আইফোনের পেজে অডিয়েন্সকে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেইখান থেকে আইফোন অর্ডার দেবার সুযোগ আছে। দারাজের ক্যাম্পেইনটির মূল লক্ষ্য হলো আইফোনটি বিক্রি করা। এই ক্যাম্পেইন থেকে যখনই একটি আইফোন বিক্রি হচ্ছে তখনই মূলত একটি কনভার্শন হচ্ছে।
কস্ট পার কনভার্শন
স্বাধারনত একটি কনভার্শনের জন্য যত টাকা খরচ হয় সেইটাকেই কস্ট পার কনভার্শন বলে। কস্ট পার কনভার্শন স্বাধারনত একটি গড় হিসেব। ধরা যাক আপনি ৫০০ ডলারের ক্যাম্পেইন চালিয়ে ১০০ টি ফোন বিক্রি করলেন আপনার ওয়েবসাইট থেকে তাহলে কস্ট পার কনভার্শন হবে ৫ ডলার।
এই টার্মগুলো খুবই বেসিক কিছু টার্ম। বই এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে এমন অনেক টার্ম আমাদের সামনে আসবে, সেগুলো নিয়ে ধীরে ধীরে আলোচনা হবে।
[…] আলোচনা করতে পারি। এটি দ্বিতীয় পর্ব। প্রথম পর্ব ডিজিটাল মার্কেটিং (পর্ব ১) -… থেকে পড়ে নিতে […]